ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি

আজকে এই আর্টিকেলটিতে ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি, ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি এবং নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমরা অনেকে আছি যারা নামাজ আদায় করি না। কিন্তু আমরা আসলে জানি না যে নামাজ  আদায় না করলে এর শাস্তি কতটুকু ভয়ঙ্কর হতে পারে। একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের অবশ্যই উচিত নামাজ আদায় করা।

যদি আপনি নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি, নামাজ পড়ার উপকারিতা, ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি, ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত, সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি

ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ নামাজ।ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদ হচ্ছে নামাজ। পবিত্র কুরআনে ৮৩ বার নামাজের আলোচনা হয়েছে।নামাজের ব্যাপারে যারা উদাসীন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন দুর্ভোগ এইসব নামাজীর জন্য নামাজের ব্যাপারে যারা থাকে গাফেল। হাশরের মাঠে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।

যার নামাজ সঠিক হবে তার সকল কাজ সঠিক বলে বিবেচিত করা হবে।তাই সকলেরই উচিত সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। আর যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না তাকে ১৫ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে। তার মধ্যে পাঁচ ধরনের শাস্তি দুনিয়াতে। তিন ধরনের শাস্তি মৃত্যুর সময়,তিন ধরনের শাস্তি কবরে। চার ধরনের শাস্তি কবর থেকে উঠার পরে।

  1. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে না তার জীবন থেকে আল্লাহতালা বরক কে উঠিয়ে দেবেন।তার জীবনে কোন বরকত থাকবে না।
  2. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না করার কারণে তার চেহারাতে যে নূরের ঝলক ছিল তা আল্লাহতালা উঠিয়ে দেবেন।
  3. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না করার কারণে সে ব্যক্তি কোন ভালো কাজের ফল পাবে না।
  4. রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে না। আল্লাহতালা তার কোন দোয়া কবুল করবেন না।
  5. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। নেক বান্দাদের দোয়ার মধ্যে থাকবে না।
  6. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। তাকে আল্লাহ তায়ালা লাঞ্ছনা ও অপমানের সাথে মৃত্যুদান করবে।
  7. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। সে মৃত্যুর সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।
  8. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। সে এমন পিপাসার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে সমুদ্রের যে পরিবারের পানি আছে সেই পরিমাণের পানি পান করলেও তার পিপাসা মিটবে না।
  9. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। কবর তার জন্য খুব সংকীর্ণ হয়ে যাবে। এমন সংকীর্ণ হবে যে এক পাশের বুকের হাড় আর এক পাশে ঢুকে যাবে।
  10. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
  11. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। তার কবরে এমন একটি চাপ দেওয়া হবে যে সাপের চোখগুলো হবে আগুনের আর সাপটির নোক গুলো হবে লোহার। ওই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের আওয়াজের মত।
সাপের আকৃতির পরিমাণ হবে একজন মানুষ যদি খুব দ্রুত বেগে দৌড়ায় তাহলে এই সাপ কে অতিক্রম করতে তার একদিন সময় লাগবে। এই সাপ বেনামাজি কে বলতে থাকবে, আমাকে আমার রব তোমার জন্য নিযুক্ত করেছে যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। 

জোহরের নামাজ নষ্ট কারণে জন্য আসর পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। আসরের নামাজ নষ্ট করার জন্য মাগরিব পর্যন্ত আর এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত দংশন করতে থাকে। এ সাপের এক দংশনে সেই ব্যক্তি ৭০ হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে। তাকে উঠিয়ে আবার দংশন করবে এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত এই সাপের আযাব সে ভোগ করতে থাকবে।

  1. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না করার কারণে কিয়ামতের মাঠে তার হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেওয়া হবে।
  2. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। কেয়ামতের মাঠে আল্লাহতালা তার উপর খুব রাগ ও অসন্তুষ্ট  হয়ে থাকবেন।
  3. যেদিকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না। তাকে জাহান্নামে দেওয়া হবে।
  4. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে না।তার চেহারায় তিনটি লাইন লেখা থাকবে-
  1. হে আল্লাহর হক নষ্ট করি!
  2. হে আল্লাহর গোস্বায় পতিত ব্যক্তি!
  3. তুমি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছিলে। তেমনি আজ আল্লাহর রহমত থেকে তুমি নিরাশ।
এভাবেই যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে না তাকে ১৫ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে।
এখন আমরা নামাজ পড়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব।

নামাজ পড়ার উপকারিতা

  • রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে পাঁচ অক্ত নামাজ আদায় করবে আল্লাহতালা তার অভাব দূর করে দিবেন।
  • আমরা কবরের আজাব নিয়ে অনেক চিন্তিত।রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে পাঁচ অক্ত নামাজ আদায় করবে আল্লাহতালা তার কবরের আজাব দূর করে দিবে।
  • আমরা সবাই চাই যে আমাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হোক। কারণ যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে সে জান্নাতি। আর কোন ব্যক্তি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব সহকারে পরে তাহলে রাসুল সাঃ বলেছেন। আল্লাহতালা কিয়ামতের মাঠে তার আমলনামা ডান হাতে দিবেন।
  • রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে পাঁচ অক্ত নামাজ আদায় করবে। সে বিদ্যুতের গতিতে পুলসিরাত পার করবে।
  • একটি চিন্তা আমাদের সকলেরই হয়ে থাকে যে আমি জান্নাতি নাকি জাহান্নামি।আপনি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব সহকারে পড়েন।তাহলে আপনি এই চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে পাঁচ অক্ত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তাকে বিনা হিসেবে জান্নাত দিয়ে দিবেন।

ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি

আমরা অনেকে আছি যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পড়ি না। ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সে সম্পর্কে জানা উচিত। 
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সে কাফের হয়ে গেল। বড়ইতা (রা:)বলেন রাসূল (সাঃ)বলেছেন মুসলমান আর কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। যে সালাত আদায় করে সে হলো মুসলমান আর সালাত আদায় করেনা সে হলো কাফের। 

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যারা সালাত আদায় করে তারা মুসলমান আর যারা সালাত আদায় করে না তারা কাফের। সালাত ব্যতীত সাহাবীগণ আর অন্য কিছু ছেড়ে দিলে কাফের মনে করতেন না। কেউ যদি রোজা ছেড়ে দিয়েছে তাকে কাফের মনে করতেন না, কেউ যদি যাকাত দিতে দেরি করেছে বা দেয়নি তাকে কাফের মনে করতেন না,তবে কেউ যদি সালাত ছেড়ে দিয়েছে তাকে কাফের মনে করতেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ)বলেন রাসূল (সাঃ) বলেন আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ পর্যন্ত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলছেন যতক্ষণ  পর্যন্ত সালাত আদায় না করছে।যদি সালাত আদায় না করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব মারবো না হয় মরবো। এই  হাদিসের ভিত্তিতে সেই কালে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেছেন কেউ যদি অলসতা করে এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে।

সেকালে ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) বলেছেন কেউ যদি অলসতা করে নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে জেলখানায় বন্দি করে পিটিয়ে সালাত আদায় করাতে হবে। বর্তমানে আরবি বিদ্বানগণ বলছেন-স্বামী সালাত আদায় করে স্ত্রী করে না,স্ত্রী সালাত আদায় করে স্বামী করে না তাহলে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শুধু তাই নয় আরাবি বিদ্বানগণ বলতে চাচ্ছেন যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেনি এরকম অবস্থায় মারা গেছে তার জানাজা হবে না। তাকে মুসলমানের কবরস্থানে কবর দেওয়া হবে না। যেখানে হিন্দু মারা গেলে ফেলে দেয় সেখানে ফেলে দেওয়া হবে শ্মশান ঘাটে। যারা সালাত আদায় করেনা তারা মহাপাপী।গুলোই হলো ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি।

ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত

  • ফজরের নামাজ ঈমানদার এর  জন্য সহজ হয় মুনাফিকদের জন্য কঠিন হয় তাই ফজরের নামাজে শামিল হওয়া ঈমানদারের পরিচয় পরিচয়।
  • ফজরের নামাজ হাজির হলে তার জিম্মাদারী আল্লাহ তাআলা নেন।ওই দিনের জন্য আল্লাহতালা জিম্মেদারী নেন। আল্লাহ নিরাপত্তার ভিতরে সে প্রবেশ করে যদি ফজরের নামাজ আদায় করে।
  • আল্লাহ তাআলার কাছে গিয়ে ওই ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেয় যে সে সালাত আদায় করছে ভালো কাজ করছে।
  • যদি কেউ ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে আল্লাহতালা তাকে সারারাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নফল নামাজ পড়ার সোয়াব দান করে।
  • ফজরের নামাজ কেউ যদি জামাতের সাথে আদায় করে আলো-আঁধারিতে কষ্ট করে কষ্ট করে মসজিদে আসে তাহলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের মাঠে পরিপূর্ণ আলোর ব্যবস্থা করে দিবেন।
  • ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেল তাহলে জান্নাতে তার সাথে আল্লাহতালার সাক্ষাৎ বা দিদার নসিব হবে।
  • যে ব্যক্তি ফজর এবং আসরের নামাজ নিয়মিত আদায় করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।
  • ফজরের নামাজ আদায় করলে। তার বরকত বৃদ্ধি হবে।
  • ফজরের নামাজের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যবর্তী সবকিছুর মালিক হওয়া চাইতেও উত্তম।
  • কেউ যদি ফজরের নামাজ আদায় করে তাহলে তার সারাদিন হাসিখুশিতে কেটে যাবে।

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ একটি। কেউ যতই অসুস্থ হোক না কেন যতই সমস্যা হোক না কেন তাকে ফজরের নামাজে আসতেই হবে। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সে কাফের হয়ে গেল। তাই আমাদের এক ওয়াক্ত নামাজও ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
এখন আসুন চলুন জেনে নিই ফজরের নামাজ না পড়ার কি শাস্তি হতে পারে। মৃত্যুর পর তাদের মাথা পাথর দিয়ে ভাঙ্গা হবে যারা ফজরের নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে ছিল [বুখারী:৭০৪৭]। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ এর সময় উঠে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা তাকে অনেক রোগের থেকে হেফাজত করেন।

আমাদের শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলটিতে ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি, ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি এবং নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত। এবং আল্লাহ তায়ালার সকল হুকুম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মনোযোগ সহকারে এবং সঠিক সময়ে পড়া উচিত। এতক্ষণ ধরে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফরমেন্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url